বেতন-বোনাস হয়নি ৬হাজার কারখানায়

বেতন-বোনাস হয়নি ৬হাজার কারখানায়

বেতন-বোনাস হয়নি ৬হাজার কারখানায়
বেতন-বোনাস হয়নি ৬হাজার কারখানায়

অনলাইন ডেস্ক: আগামী বৃহস্পতিবারের (২৮ এপ্রিল) পর থেকে শুরু হতে পারে ঈদের ছুটি। সুতরাং শিল্প কারখানাও খোলা থাকবে আর মাত্র দুদিন। কিন্তু এখনও দেশের ৯ হাজার শিল্প কারখানার মধ্যে ৬ হাজার কারখানার শ্রমিকরা তাদের বেতন ও বোনাস পাননি।

অথচ চলতি মাসের ১১ এপ্রিল পোশাকসহ বেশির ভাগ সেক্টরের মালিকরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যে তারা সরকার নির্ধারিত ছুটির আগেই বেতন ও বোনাস পরিশোধ করবেন।

রাজধানীর বিজয়নগরের শ্রমভবনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, ঈদের সরকারি ছুটির আগে সকল কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি ন্যূনতম এপ্রিল মাসের প্রথম ১৫ দিনের বেতন ও বোনাস দিতে হবে।

ফলে বকেয়া বেতন ভাতা ও বোনাসের দাবিতে গতকাল সোমবার তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা ইন্ট্রাকো ডিজাইন লিমিটেড ও ইন্ট্রাকো ফ্যাশন লিমিটেড এবং কটন টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করে। তারা রাজধানীর উত্তরা-মিরপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে।

অবরোধের প্রেক্ষিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান মঙ্গলবার কারখানা মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের ডেকেছেন। তার কার্যালয়ে দুপুরে ত্রিপক্ষীয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় বেতন ও বোনাসের বিষয়ে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

শ্রমিকরা জানান, ঈদের মাত্র বাকি এক সপ্তাহ এখন পর্যন্ত কারও দুই মাসের, কারও তিন মাসের বেতন বাকি। হয়নি ওভারটাইম ও বোনাস। শুধু ওই তিন কারখানাই নয়, এর আগের সপ্তাহেও বেশ কয়েকটি কারখানায় বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে আন্দোলন হয়েছে।

কল-কারখানায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকিতে নিয়োজিত শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, সারাদেশে ৯ হাজার ১৭৬টি গার্মেন্টস বা শিল্প-কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে সোমবার (২৫ এপ্রিল) পর্যন্ত ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে এমন কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ১৫১টি। যা শতাংশের হিসাবে দাঁড়ায় ৩৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। যার মানে দাঁড়ায় ৬ হাজার কারখানায় সরকার নির্ধারিত বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। যা শতাংশের হিসেবে প্রায় ৬৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে শিল্প পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত (২৫ এপ্রিল) আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে দেখছি, বেশির ভাগ কারখানাই বেতন ও বোনাস পরিশোধ করেনি। তবে আশা করছি, কোনো ধরনের ঝামেলাই ছাড়াই কারখানা মালিকরা বেতন ও বোনাস পরিশোধ করবেন। আমরা এগুলো তদারকি করছি, যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য কঠোর নজরদারিতে রেখেছি।

বেতন বোনাস না হওয়ার বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোতে বেতন ও বোনাস দেওয়া শুরু হয়েছে। আমাদের বোর্ডের মেক্সিমাম সদস্যদের কারখানায় বেতন-বোনাস দেওয়া হয়েছে। সরকারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সাবাইকে বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে।

শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, ঢাকাসহ দেশের আটটি অঞ্চলে মোট ৯ হাজার ১৭৬টি শিল্প কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার এর মধ্যে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানার সংখ্যা ১ হাজার ৬১৫টি। আর নিটওয়ার কারখানা মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানা ৬৮৫টি।

বড় এই দুটি সংগঠন ছাড়াও বস্ত্র খাতের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সদস্য কারখানা ৩৩৮টি, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেপজা) আওতাভুক্ত কারখানা ৩৪৮টি, দেশের পাটকল রয়েছে ৮৩টি। এছাড়া চামড়াজাত পণ্য, আসবাব, সেলফোন সংযোজন, ওষুধপণ্যসহ অন্যান্য খাতের কারখানা রয়েছে মোট ৬ হাজার ১০৭টি।

এই ৯ হাজার কারখানা ঢাকার পাশাপাশি আশুলিয়া, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেটে অবস্থিত। এর মধ্যে আশুলিয়াতে ৪৩৩টি, গাজীপুরে ৮৭৬, চট্টগ্রামে ৫৮৮, নারায়ণগঞ্জে ৩১০, ময়মনসিংহে ১৬৯, খুলনায় ১৮১ ও সিলেটে ৫৯৪টি শিল্প-কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেছে। অর্থাৎ এসব এলাকার আরও ৬ হাজার ২৫টি কারখানায় শ্রমিকদের বেতন ও বোনাস দেওয়া হয়নি।

গার্মেন্টস মালিকদের আরেকটি সংগঠন বিএকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, আর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে। আমরা কোনো শ্রমিকে বেতন ও বোনাস দেওয়া ছাড়া ঈদ করবো না।

শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বলেন, আমাদের দাবি ছিল ২০ রোজার মধ্যে বোনাস দেওয়ার। কিন্তু কৌশলে গার্মেন্টস মালিকরা সরকারি ছুটির দিন পর্যন্ত নিয়েছে। ফলে আমাদের শঙ্কা অধিকাংশ শ্রমিকরা তাদের বেতন বোনাস থেকে বঞ্চিত হবে। আমরা দ্রুত বেতন বোনাস দেওয়ার জন্য মালিক ও সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।

মতিহার বার্তা / এম টি

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply